ঢাকা,সোমবার, ২০ মে ২০২৪

করোনায় অসহায়দের পাশে বীর মুক্তিযোদ্ধা শওকত আলী মাষ্টার কল্যান ট্রাস্ট 

প্রেসবিজ্ঞপ্তি :: করোনা পরিস্থিতিতে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে গিয়ে কর্মহীন হয়ে পড়া নরসিংদীর জেলার মনোহরদী উপজেলার পীরপুর গ্রামের নিম্ন আয়ের মানুষদের মাঝে খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করেছে ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা শওকত আলী মাস্টার কল্যান ট্রাস্ট’ নামের একটি সংগঠন। প্রায় দুইশ’ জন এর উপর দুস্থ মানুষের হাতে চাল, ডাল, আলু, তেল সহ আরও কিছু নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী দেওয়া হয়।

বীরমুক্তিযোদ্ধা শওকত আলী মাস্টার স্মৃতি কল্যাণ ট্রাস্টের সভাপতি মোহাম্মাদ ইকবাল হোসাইন বর্তমানে চাকুরীসূত্রে কক্সবাজার জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হিসেবে কর্মরত আছেন। নানা রকম মানবিক কাজের জন্য কক্সবাজার সহ পুরো বাংলাদেশেই তিনি আজ আলোচিত। তার নির্দেশনায় ও অর্থায়নে তার বাবার নামে সংগঠন ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা শওকত আলী মাস্টার কল্যান ট্রাস্ট’ কর্মহীনদের জন্য আজ পীরপুর গ্রামের নিম্ন আয়ের মানুষের মাঝে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করা করেন।

কে ছিলেন শওকত আলী মাষ্টার?

মো: শওকত আলী মাস্টার। মহান মুক্তিযুদ্ধের এক বীর সেনানী। একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধের সেই উজ্জ্বল স্মৃতি যুগযুগ ধরে শুধু বাঙ্গালিকেই নয়, মুক্তিকামী সকলকেই যোগাবে প্রেরণা। ১৯৩৮ সালের ৯ মার্চ মনোহরদী উপজেলা পীরপুর গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্ম তার। পিতা মুন্সী আবদুস সোবহান ও মাতা সাহেরা বানু।

কিছু কিছু সময় আছে যা অতীতের গর্ভে স্থান পেয়েও হয়না বিলীন। ঘুষ, দূর্নীতি আর অন্যায়ের বিরুদ্ধে ছিলেন এক লড়াকু সৈনিক। ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় সমাজে রেখেছেন নজিরবিহীন দৃষ্টান্ত।

ত্যাগে সমুজ্জ্বল, গৌরবে উদ্ভাসিত, সেসময় আলো ছড়ায় চিরদিন অমলিন। একাত্তর তেমনি এক রক্তাক্ত গৌরবদীপ্ত সময়। সংগ্রামে, ত্যাগে, বীরত্বে মানব অভ্যূদয়ের এক অবিনাশী অপরাজেয় সময় শিক্ষক নেতা হিসেবে ছিলেন যেমন আপোষহীন তেমনি কৃষি-কৃষকের উন্নয়নেও রেখেছেন ব্যাপক ভূমিকা। ছিলেন অনন্য এক সমাজসেবক।

কোথায় ছিলোনা তার দীপ্ত পদচারনা। তার একজীবনের সবকিছুর সন্নিবেশ এক হিরন্ময় মানুষ হিসেবেই প্রতিষ্ঠা দিয়েছে তাকে। কর্মে ভাস্মর সেই মানুষটি প্রয়াত হন ২২ নভেম্বর ১৯৯৯।

বর্তমানে নরসিংদীর জেলার মনোহরদী উপজেলার পীরপুর গ্রামে অবস্থিত বীর মুক্তিযোদ্ধা শওকত আলী মাস্টার স্মৃতি গণপাঠাগার। ২০১৬ ইং সনে স্থাপিত এই পাঠাগারটির অধীনে লাইব্রেরীর সুযোগ সুবিধাছাড়াও বীরমুক্তিযোদ্ধা শওকত আলী মাস্টার স্মৃতি বৃত্তি পরীক্ষা-২০১৭,  ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা শওকত আলী মাস্টার কল্যান ট্রাস্ট নামের বিভিন্ন সমাজ সেবা মূলক কাজ করে ইতিমধ্যে মানুষের হৃদয়ে জায়গা করে নিয়েছেন।

নিজ জন্মস্থানে ত্রাণ দেওয়ার বিষয়ে আমাদের সহকর্মীতারেক আজিজ যোগাযোগ করলে মোহাম্মদ ইকবাল হোসাইন বলেন, এখন সময় মানবিকতার হাত বাড়িয়ে দেওয়ার।

বর্তমানে আমাদের চিন্তা, মনন, মেধা সৃষ্টিশীল মন যেন কালো মেঘে ছেয়ে গেছে। কখনো ভাবতে পারিনি, বিশ্বের প্রতিটি মানুষের মনে এ রকম একদিন একই আতঙ্ক, একই ভয় বিরাজ করবে। এ ক্ষেত্রে ধনী–গরিবের কোনো ভেদ নেই, শিল্পীর কোনো গ্রেড নেই। অহংকার, প্রাচুর্য, মানবিকতা, দয়া শব্দগুলো যেন মিলেমিশে এক হয়ে গেছে। আমরা সবাই এমন এক যুদ্ধে নেমেছি, যেখানে শত্রুকে দেখা যায় না। কখন কোথা থেকে শত্রু এসে আমাকে আক্রমণ করবে, আমি হয়তো বুঝতেও পারব না। মানবজাতি আজ কত অসহায়! পৃথিবী কোথায় চলে গেছে! কত অগ্রসর বিজ্ঞান, কত উন্নত প্রযুক্তি, কোথায় আজ? একটি ভাইরাস লন্ডভন্ড করে দিচ্ছে মানবজাতিকে।

এই সময়ে ভীষণ প্রয়োজন সচেতনতা ও মানবতা। এখনকার এই যুদ্ধে এই দুটো জিনিস ভীষণ প্রয়োজন। বিশেষ করে আমাদের দেশটাকে নিয়ে যখন ভাবি তখন মনে হয়, পৃথিবীর উন্নত দেশগুলোতে যদি লাশের মিছিল বড় হতে থাকে, তাহলে আমাদের এই আবেগপ্রবণ জাতির কী অবস্থা হবে! আমাদের দেশের মানুষগুলো অনেক সাহসী এবং সরল। কিন্তু এখন আমাদের সাহস দেখিয়ে কোনো লাভ নেই। এখন যুদ্ধের পদ্ধতি পরিবর্তন করতে হবে। আমাদের সচেতন হতে হবে নিজের জন্য, পরিবারের জন্য ও দেশের জন্য। আর অন্যদিকে আমরা যারা একটু বিত্তশালী আছি অন্তত আমাদের আশে-পাশের মানুষগুলো যেন কষ্ট না করে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।

তিনি আরও বলেন, আমাদের অঙ্গনের প্রতিটি সচ্ছল মানুষ সাহায্য সহযোগিতার বিষয়টির ওপর বিশেষভাবে নজর দেওয়া প্রয়োজন। প্রতিটি গ্রামের বিত্তশালীদের সঙ্গে কথা বলে তাঁদের অসচ্ছল পাড়া-প্রতিবেশীদের তালিকা করে তাঁদের পাশে দাঁড়ানো ভীষণ প্রয়োজন। আজ সময় এসেছে একে অন্যের জন্য মানবিকতার হাত বাড়িয়ে দেওয়ার। সময় এসেছে একে অন্যের হাত শক্ত করে ধরে বেঁচে থাকার স্বপ্ন দেখার। আমরা যদি বেঁচে থাকার স্বপ্ন না দেখি, তাহলে ধীরে ধীরে অন্ধকারে ডুবে যাব। সৃষ্টিকর্তার কাছে আজ আমাদের সবারই চাওয়া—কী হবে গতি, বিশ্বপতি / শান্তি কোথা আছে / তোমারে দাও, আশা পুরাও / তুমি এসো কাছে।

পাঠকের মতামত: